রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫২ পূর্বাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি: বরগুনা সদর হাসপাতালের নির্মাণাধীন সপ্তমতলা ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ ভবনটি নির্মাণে নিম্ন মানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে।গণপূর্ত বরগুনা জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা সদর হাসপাতালকে ৫০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার জন্য গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে একটি ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরপর ২০১৩ সালে গণপূর্ত বিভাগ ৩১ কোটি ৩১ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৭ টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবদুল খালেক এন্টারপ্রাইজকে ভবনটি নির্মাণের জন্য কার্যাদেশ দেয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী ৩০ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ছয় বছরেও কাজ শেষ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
সোমবার সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ভবনটির প্রবেশদ্বারে দেয়াল ও বেশ কিছু রুমে ফাটলের চিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়াও দুটি বিমে ফাটলের চিহ্ন দেখা গেছে।
নির্মাণাধীন ভবনটির বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেওয়ায় কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ—ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণে নিম্ন মানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করেছেন, যার ফলেই হস্তান্তরের আগেই বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে।
বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, হাসপাতালটি নির্মাণে শুরু থেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড়িমসি করে আসছে। হাসপাতালের দাবিতে বরগুনার নাগরিক সমাজ যেমন আন্দোলন করেছিল, ঠিক তেমনি এই ত্রুটিপূর্ণ ভবন যদি ঠিকাদার হস্তান্তর করতে চায়, তাহলেও কঠোর আন্দোলন করা হবে।
বরগুনার নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বরগুনা জেলা রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য মনির হোসেন কামাল বলেন, দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আমরা হাসপাতাল পেয়েছি। সেই হাসপাতালে ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণ হলে সেটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।
তবে ভবনটি নির্মাণাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, অর্থাভাবে আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারিনি। ভবনটির যে অংশে ফাটল দেখা গেছে সেটি মূল ভবনের অংশ নয়। এর ফলে মূল ভবনের কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
ভবনে ফাটল ও নির্মাণে দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বর্তমান স্বত্বাধিকারী আবদুল হাদী রুবেল মুঠোফোনে বলেন, আসলে ভবনে যেখানে ফাটল দেখা যাচ্ছে এগুলো মেজর কোনো বিষয় না। এখানে ফাইনাল কোড দিলে আর এই ফাটল থাকবে না। টোটাল বিল্ডিং পাথর ঢালাই দিয়ে করা হয়েছে। তাই বিল্ডিংটি কোনো কারণেই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ওপর থেকে দেখলে মনে হয় ফাটল আসলে এগুলো ফাটল না। এটায় কোনো রিস্ক নেই।
সময়মতো কেন ভবনটি এখনো হস্তান্তর করতে পারলেন না কেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এই প্রতিষ্ঠানের মালিকের ছেলে। কাজটি শুরু হওয়ার পর আমার বাবা মারা যায়। মারা যাওয়ার পর আমি এটার হাল ধরি। এর মধ্যে বেশ কিছু সময় নষ্ট হয় এটা আমাদের ইচ্ছাকৃত না। আগামী এক মাসের মধ্যে আমরা ভবনটি হস্তান্তর করতে পারব।
নির্মাণাধীন ভবনের ফাটলের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য বিভাগের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. মো. আবদুর রহিম বলেন, ভবনে ফাটলের বিষয়টি আমরা সরেজমিন পরিদর্শন করে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাব। তবে কোনোভাবেই ত্রুটিপূর্ণ ভবন গ্রহণ করা হবে না।
এ বিষয়ে বরগুনা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু জাফর বলেন, বড় বড় ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এ রকম ছোটখাটো সমস্যা হতে পারে। তবে এই ফাটলে মেজর কোনো সমস্যা না। এর ফলে ভবনের কোনো ক্ষতি হবে না। তারপর কোনো ত্রুটি যদি ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে, তবে সেটা আমরা যাচাই-বাছাই করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বুঝে নেব
Leave a Reply